এক বছর আগের কথা...
মিরপুর ১০ নম্বর চত্বরের আশে পাশে মাঝে মাঝেই উদ্ভ্রান্ত দুই যুবক কে দেখা যেত। একজন সিরিয়াস মুখে মুখ চোখ শক্ত করে বগলে একটা গোলাপি প্লাস্টিক ফাইল নিয়ে হাঁটছে আর আরেকজন যার বয়স অপেক্ষাকৃত কম ও মাথায় প্রায় রাপুঞ্জেল এর কাছাকাছি চুল সে হাসি হাসি মুখে চারদিক দেখছে। তারা দুইজন ১০ নম্বর চত্বরটা পার হয়েই কোনার একটা টং এ চা খেত ও সিরিয়াস মুখে আলোচনা করত। আলোচনার বিষয়বস্তু হল
‘কার্টুনিস্ট এসোসিয়েশন’ - বাংলাদেশের কার্টুনিস্ট সমাজকে এক করে একটা সংগঠন দাঁড়া করানো এবং তার সরকারী নিবন্ধন করানোর চাইতে যে গন্ধমাদন থেকে বিশল্যকরণী খুঁজে বের করা অনেক সহজ এ বিষয়ে দু’জনেই একমত হয়ে চা শেষ করত, আর লম্বা পদক্ষেপে সমাজ কল্যাণ অধিদপ্তর এর শতবর্ষী দালানটায় (কে জানে কতবারের মত) ঢুকত। সেই দালানে কোনটা যে দর্শণার্থীর বসার চেয়ার আর কোনটা যে রান্নাঘরের পিঁড়ি তা বোঝার উপায় নেই। কিন্তু তার মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের সমাজ কল্যাণের লাখো লাখো ফাইল ডান থেকে বামে যায় আবার বাম থেকে ডানে আসে। এই অফিসে এসে ওই দুই যুবকের সরকারী অফিস নিয়ে বিচিত্র অভিজ্ঞতা হল। অফিসের দুই পদস্থ কর্মকর্তা তাদের কল্পনারও অতীত সাহায্য করলেন। বলতে গেলে ওই দুই বালখিল্য তরুনের পুরো কাজটাই কোন এক অদ্ভুত কারণে তাঁরা দু’ হাতে করে দিলেন।পৌনঃপুনিক ভাগের মত চলতে থাকা কাগজপত্র এক সময় জমা দেয়া শেষ হল, যুবক দুইজনকেও এবার হাসি মুখে ঢাকার অন্যান্য টং এ চা খেতে দেখা গেল। কারণ সমাজ কল্যাণ অধিদপ্তর তাদের সবুজ সংকেত দিয়ে কাজ শুরু করতে বলে দিয়েছে।
এইবার আসল কাজ... কার্টুন প্রদর্শনী
ওই দুইজনকে চিমসা মুখে আবার ঢাকা শহরে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেল। কার্টুন যোগাড় করার চাইতে বিসিএস এগজামে বসাটা যে আরো সহজ এ ব্যপারেও তারা এবার একমত হল। কার্টুন জোগাড় করতে গিয়ে দেখা গেল ঢাকার সবচেয়ে ব্যস্ত সম্প্রদায়ের নাম আসলে কার্টুনিস্ট। টানা একমাসের ফোনাফুনি ও কাবাব নান সহযোগে একাধিক রসনাবিলাসের পরেও তাদের ভুলিয়ে ভালিয়ে কার্টুন যোগার করা গেলো না। ওদিকে ঢাকার প্রায় সব গ্যালারি তাদের নিউ ইয়ার রেজ্যুলুশন হিসেবে আর মাগনা গ্যালারি দেবেন না বলে ঘোষণা দিচ্ছেন। একেবারে ফকিরা ভাবে করতে চাইলেও মিনিমাম হাজার চল্লিশেক টাকা বেরিয়ে যাবে এমনটা তারা জানিয়ে দিলেন। যুবকের একজন বার্ধক্যের দিকে ঝুঁকতে শুরু করলেন। সে দুঃস্বপ্ন দেখেতে থাকলো যে, প্রদর্শনীর দিন সব ফ্রেমে তার মুখ, আর তা-ই দেখে দর্শকরা হেসে গড়িয়ে পরছে...
কিন্তু না, শেষ মুহুর্তে চারিদিকে সাড়া পরল। দেখা গেল তরুন সমাজ মুখের যে কোন কথার চেয়ে
জয় মার্ক জাকার্বার্গ!
প্রদর্শনীর বিষয়বস্তু ঠিক করে দিয়েছিলেন শিশির ভট্টাচার্য, সেটা ছিলো ‘ঢাকা’ তার সাথে নাম মিলিয়ে ইভেন্টের নাম ঠিক করা হল ঢাকাটুন। গ্যালারি না পাওয়ায় ধর্ণা দেয়া হোল হাতের পাঁচ জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বর -এ। যেখানে এর আগে ২০০৯ এ ফিলিস্তিনের গাজায় ইজরাইলি সেনাবাহিনীর গণহত্যার প্রতিবাদে একবার কার্টুন প্রদর্শনী করা হয়েছিলো। সেবারের মত এবারেও প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষ বিনা পয়সায় তিনদিনের জন্যে তাঁদের সামনের জায়গাটা কার্টুনিস্টদের দিয়ে দিলেন।
প্রদর্শনীর ঠিক আগের দিন 'বানের লাহান'কার্টুন জমা পড়তে লাগলো। আসে না আসে না করে কার্টুন চলে এলো ৮০ টা! ওইদিকে ফ্রেম ছিল ৬০ টা। এবার রীতিমত বাছাবাছি করে কার্টুন ফ্রেমে তোলা হল। ওদিকে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রেস রিলিজ পাঠিয়ে সব নিউজ এডিটরদের বিরক্তি চরমে তোলার ফল পাওয়া যেতে লাগলো সকালেই। বিভিন্ন দিক থেকে সাংবাদিকরা আসতে শুরু করলেন (দুপুরে ৮৬ নম্বর প্রেস রিলিজ দেয়ার পর আয়োজকদের সন্দেহ হতে লাগলো যে ঢাকা শহরে আজ আর কিছুই কি ঘটছে না?)।
এই প্রদর্শনী করতে গিয়ে আয়োজকদের একটা উপলব্ধি হল যে, তরুন প্রজন্ম আর প্রবীণ প্রজন্মের পার্থক্য। তরুণ প্রজন্মের কাউকে প্রদর্শনীতে সময় মত পেতে কম করে হলেও যা যা করতে হয়েছে তা নিম্নরুপ-
১. মোবাইল ফোন ৬ বার
২.
৩.
৪.
৫. কাবাব সহযোগে মিটিং ২ বার
তারপরেও সময়মত আসতে পেরেছিলো চার থেকে পাঁচজন। আর সিনিয়রদের অর্থাৎ এসোসিয়েশনের উপদেষ্টাদের আসবার জন্য যা করা হয়েছিলো তা হল-
১. বাসায় গিয়ে বলা ১ বার
২. ফোন ১বার
ব্যস! সত্যি তাই। এবং তার ফলে যারা যারা ঠিক সময় মত ওইদিন চলে এসেচিলেন তাঁরা হলেন
আহসান হাবীব, কাইয়ুম চৌধুরী, রফিকুন নবী, শিশির ভট্টাচার্য
পেছনে (ডান দিক থেকে সামনে)কার্টুনিস্ট শিখা, (ডান দিক থেকে পেছনে) কার্টুনিস্ট কুদ্দুস, কার্টুনিস্ট সাদাত, কার্টুনিস্ট হাসান, কার্টুনিস্ট রায়হান (সবার পেছনে), কার্টুনিস্ট জুনায়েদ আজীম, কার্টুনিস্ট শাহরিয়ার শরীফ, (তাঁর পেছনে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে)কার্টুনিস্ট বিপ্লব চক্রবর্তী ও কাওছার মাহমুদ, কার্টুনিস্ট আবু (শাহরিয়ার শরীফের পাশে), কার্টুনিস্ট তন্ময়, (তার পেছনে পাশাপাশি) কার্টুনিস্ট মাসুম, কার্টুনিস্ট পলাশ ও কার্টুনিস্ট মানিক (অথবা রতন?), আর একেবারে বাম দিক থেকে কার্টুনিস্ট মানিক (খুব সম্ভব) টিপু, কার্টুনিস্ট মেহেদী হক ও কার্টুনিস্ট মিতু।
আরো যারা পরে এসে যোগ দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে আছেন কার্টুনিস্ট রিফাত-আল-হাসান, কার্টুনিস্ট রাজীব, ও কার্টুনিস্ট সাজিদ বিন দোজা। ছবিটি তুলবার পর সর্ব্বসম্মতিক্রমে একে 'ঐতিহাসিক'আখ্যা দেয়া হয়।
যা-ই হোক, সকাল সাড়ে এগারোটায় আয়োজকদের কম্বুকন্ঠে (মাইক এর দায়িত্বে থাকা ভদ্রলোক ওইদিন ঘুম থেকে উঠতে পারেন নি বলে আহসান হাবীব, শিশির ভট্টাচার্য, রফিকন নবী ও কাইয়ুম চৌধুরীকে ভলিউম বাড়িয়ে কথা বলতে হয়েছে ) সংক্ষিপ্ত আলোচনা (অর্থাৎ কেন এই... ইত্যাদি) শেষে চত্বরের ইজেলে রাখা সাদা ক্যনভাসে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী তাঁর আত্মপ্রতিকৃতি এঁকে প্রদর্শনীর উদ্বধনী করেন। এরপর একে একে রফিকুন নবী, শিশির ভট্টাচার্য ও আহসান হাবীব এঁকে দেন শুভেচ্ছা বার্তা।
২য় ছবিঃ কার্টুনিস্ট র’নবী,
৩য় ছবিঃ তরুনদরে উদ্দশ্যে জ্বালাময়ী বক্তব্য দচ্ছিনে কার্টুনিস্ট শিশির ভট্টাচার্য।
প্রদর্শনী শেষ হবার পর সেই দুই যুবকের আকর্ণ বিস্তৃত চেশ্যায়ার বিড়ালের মত হাসি দেখে অনেকেই তাদের মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাদের কথা বাদ দিয়ে এবার এক নজরে প্রদর্শনীটা দেখা যাক।
প্রদর্শনীর নামঃ ঢাকাটুন
কার্টুনের সংখ্যাঃ ৭৪
কার্টুনিস্টের সংখ্যাঃ ৩৫
ভেন্যুঃ জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বর
সময়ঃ ৯ থেকে ১১ ই জানুয়ারি, ২০১০
সবকিছু শেষে যাদের ছাড়া এই ইভেন্ট কখোনো আলোর মুখ দেখতে পেতো না তাদের নাম
কার্টুনিস্ট আবুল হাসান আবু (এসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক-ইনারে ছাড়া এদ্দিন কিভাবে বাকি প্রদর্শনীগুলি হইছে তা সত্যি অদ্ভুত)
কার্টুনিস্ট তারিক সাইফুল্লাহ (এসোসিয়েশনের প্রচার সম্পাদক)
কার্টুনিস্ট রকিবুল হাসান (এসোসিয়েশনের জনকল্যাণ সম্পাদক)
কার্টুনিস্ট মিনার রহমান ও কার্টুনিস্ট সাদিয়া
প্রদর্শনী তো হল... এবার?, ওই দুই যুবক কোথায়? তাদের পরিচয়ই বা কি? জানতে হলে অপেক্ষা করুন আগামী প্রদর্শনী পর্যন্ত। কারণ এই দু’ জনকে আবার নাকি ধানমন্ডি এলাকায় কঠিন মুখে ঘুরতে দেখা যাচ্ছে।
Mojapailam.........thanx. bishesh kore golpota...
ReplyDeleteদুই যুবকের একজন মেহেদী হক আরেকজন তন্ময়! হে হে হে মজা নষ্ট কইরা দিলাম। :P
ReplyDeleteKi Telesmati karbar!!! Dui Jubok to osaddho sadhon korsen. Dhoinnobaad sobaike... valo laglo pore..
ReplyDelete