গত ১৬ই অক্টোবর হাতিরপুলের সেভেন হিল রেস্তোঁরায় হয়ে গেল কার্টুন ও ক্যরিকেচার ওয়ার্কশপ। বাংলাদেশের পত্রপত্রিকায় কর্মরত প্রায় সব তরুণ কার্টুনিস্ট এই ওয়ার্কশপে আসতে পেরে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আসন্ন কার্টুন মেলা উপলক্ষ্যে সবাই এই ওয়ার্শকপে নড়েচড়ে বসেন (কেউ কেউ শুয়েও পড়েন) সকাল এগারোটা থেকেই গুটি গুটি পায়ে সবাই সাতপাহাড় রেস্তোরাতে এসে জমতে শুরু করেন। জানা যায় পাহাড়ে উঠতে হবে লিফটের ৬ এ। যথারীতি সবার আগে এসে পৌঁছান এসোসিয়েশনের উপদেষ্টা কিংবদন্তী কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব। এর পর একে একে আধা ঘন্টার মধ্যে ১৫ জন কার্টুনিস্ট এসে যান। সর্বসম্মতিক্রমে প্রথমেই কফি ব্রেক দিয়ে কার্যক্রম শুরু হয়। এর পর সবার হাল্কা ঝিমানির পর আহসান হাবীব তাঁর বক্তব্য শুরু করেন। সেই সত্তরের দশকে তাঁরা যখন কার্টুন শুরু করেন তখনকার থেকে এখনকার সুবিধা ও অসুবিধা ইত্যাদী নিয়ে কথা হয়। সবাই আবারো টের পান যে এ সময়ে ডিজিটাল টেকনোলজি তাদের জীবনের কত সময় বাঁচিয়ে দিয়েছে। সে সময়ে কপি পেস্ট বা একই ছবি বড় ছোট করার কোন উপায়ই ছিলো না। এই প্রসঙ্গেই তিনি আক্ষেপ করে বলেন সেই তুলনায় আমাদের কাজের পরিমাণ অনেক কম। বর্তমানের পত্রিকার ফান সাপ্লিমেন্টের জোয়ারকে তিনি পজিটিভলই দেখেন এ কথা বলার পর পর সেটার কিছু নেতিবাচক দিক নিয়েও বললেন। যেমন সেখানে 'কার্টুন' না হয়ে বরং ইলাস্ট্রেশন বেশী হচ্ছে। মানে অন্য কারো একটা 'লেখা' র সাথে কার্টুনিস্ট কিছু একটা এঁকে দিচ্ছেন। বিশুদ্ধ কার্টুন আর হচ্ছে না। আবার অনেক ভাল ভাল আইডিয়া দেখে হাসতে গিয়ে নিচে ছোট করে যখন দেখা যায় 'ওয়েবসাইট থেকে' তখন একটু দমে যেতে হয়। তাই সবাইকে আইডিয়া ভিত্তিক বেশী বেশী কাজ করতে আহবান জানান তিনি। এর পরেই কমিক্স নিয়ে কথা হয়। শুধু দুই তিন পাতা করে কার্টুন এঁকে হবে না, আমাদের এখন কমিক্স শুরু করতে হবে- বলেন তিনি। এবং এখনো কেন আমরা কমিক্স করছি না সেটা জানতে চান তিনি। জবাবে বের হয়
- আলসেমী লাগে
- গল্প পাই না
- প্রকাশক কই
- কিভাবে করব
একে একে সব গুলিরই জবাব মেলে সাথে সাথে। রেডিমেড গল্প দিয়ে শুরু করতে বলা হয় সবাইকে (সাথে সাথে একটা কৌতুক বলে সবাইকে সেটা কমিক্স এর মত করে আঁকতে বলা হয়-সবাই প্রবল উৎসাহে আঁকতে বসে) কমিক্স আঁকলে প্রকাশক তিনি নিজে জোগাড় করে দেবেন এমন কথা দেন। কিভাবে করব এর জবাবে অচিরেই এই বিষয়ক একটা কর্মশালা করা যেতে পারে বলে জানান। দেখতে দেখতে দুপুরের খাবারের সময় হয়ে যাওয়ায় ইভেন্টের মূল সমন্বয়কারী ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট 'শোরগোল' এর ডিরেক্টর ইমরান ভাই সবাইকে 'বুফে'' তে ডাকেন। (সবাই এখানে দ্বিগুণ বেগে ঝাঁপিয়ে পড়েন)। খাওয়া দাওয়া শেষে ঠিক ৩ টা ৩৩ মিনিটে এসে পৌঁছান শিশির ভট্টাচার্য। সে সময়ে প্রজেক্টরে চলতে থাকা জেসন সেইলারের ক্যারিকেচার বিষয়ক ভিডিও টিউটোরিয়াল তিনি সবার সাথেই বসে দেখেন। এর পরে ক্যারিকেচার নিয়ে খুবই সংক্ষেপে তরুণ কারটুনিস্টদের কিছু উপদেশু দেন তিনি। সবাইকে যার যার নিজের ক্যারিকেচার করতে বলা হয় (এ সময়ে অনেককেই কপি করার চেষ্টা করতে দেখা যায়, একজন তাঁর মানিব্যাগ থেকে নিজের ছবি দেখে লুকিয়ে লুকিয়ে আঁকতে গিয়ে শিশির স্যার এর হাতে ধরা খান)। সেখানে বেশ কিছু মজার ড্রয়িং চলবার পরে এরপর চলে শিশির ভট্টাচার্যের ক্যারিকেচার করার পালা। সেই পর্ব শেষে আসন্ন প্রদর্শনী নিয়ে তিনি বেশ কিছু মূল্যবান কথা বলেন। মূলতঃ আইডিয়া বিষয়ক। এর ফলে অনেকের কাছেই প্রদর্শনীতে কাজ দেবার জন্যে আইডিয়া করাটা আগের চে' সহজ হয়ে যায়।
বিকেল পঁচটার দিকে সবাই ধীরে ধীরে যে যার বাসায় (সবাই খেয়াল করলে দেখবেন তার পরদিন প্রায় কোন পত্রিকাতেই কার্টুন বের হয় নি, সবাই এই কোর্সের জন্যে অফিস বাদ দিয়ে বসে ছিল)। ফিরবার সময় সবাই এক বাক্যে স্বীকার করলেন তার কার্টুনজীবনের এ পর্যন্ত সবচেয়ে দারুণ দিনটা এদিনই ছিল (অনেক বললেন সেটার জন্যে নাকি 'বুফে' টাই দায়ী)।
যাই হোক, এসোসিয়েশনের সবাই সেদিন বাংলাদেশের এই কিংবদন্তি দুই কার্টুনিস্টকে একত্রে পেয়ে যথেষ্ট গর্ব নিয়ে নতুন উদ্যমে কাজে ফিরে যায়। কর্মশালার এটাই প্রাপ্তি।
|
কর্মশালার পোস্টার |
|
আহসান হাবীব |
|
কার্টুনাচার্যের পাঠ |
|
কমিক্স কেন হচ্ছে না (চুলের যত্ন নিয়েই অনেকে সময় পায় না অবশ্য) |
|
হুমমমম |
|
লাউঞ্জের চিপায়-১ |
|
লাউঞ্জের চিপায়-২ |
|
সর্বডানে মাসুম ভাই তাঁর আজদহা সাইজের পেন্সিলটা হারানোর আগে |
|
সাদাত, ডেইলি স্টার থেকে পালিয়ে এসে সেভেন হিলে কমিক্স আঁকা চলছে |
|
ফিসিফিস |
|
আবু ভাই, ছবি তোলার সময় ভুড়ি চাপানোর ব্যর্থ চেষ্টা |
|
আবু ভাই, দম বন্ধ অবস্থায় |
|
কালের কন্ঠে পরদিন কার্টুন না যাবার কারণ- কার্টুনিস্ট বিপ্লব এখানে |
|
ক্যারিকেচারিস্ট রিও ষুভ |
|
আরাফাত- এ সব আমি বাঁ হাতেই পারি |
|
কার্টুনিস্ট জাহানারা নার্গিস- বুফে'তে পাশে সাদাত ও কার্টুনিস্ট রাজীব |
|
ইফতারির আগে (আরাফাতের দোয়া ও মোনাজাত) |
|
ছবিটা একটু পরে তোলেন, লাইট না থাকলে আমি আসব না |
|
তরুণ কার্টুন শিল্পীজ |
|
ড্রয়িং এর শেষ সময় পর্যন্তও আইডিয়া পালটে যেতে পারে |
|
সেলফ ক্যারিকেচার আঁকছেন মাস্টার ক্যারিকেচারিস্ট |
|
আইডিয়া নিয়ে আরো ভাবতে হবে |
|
আঁকো |
|
জ্বী স্যার |
|
গ্রুপ ছবি |
|
হাস্যোজ্জ্বল গ্রুপ ছবি |
সেদিন ওয়ার্কশপে কার্টুনিস্ট যারা যারা ছিলেন
-নাজমুল মাসুম-------------কালের কন্ঠ
-বিপ্লব--------------------কালের কন্ঠ
-ষুভ ---------------------কালের কন্ঠ
-আরাফাত করিম-----------উন্মাদ
-তন্ময়-------------------ডেইলি সান
-র্যাটস আসিফ------------ফৃ ল্যান্সার
-আবু হাসান --------------ফৃ ল্যান্সার
-রাজীব-------------------উন্মাদ
-জাহানারা নার্গিস-----------উন্মাদ
-মোর্শেদ মিশু--------------উন্মাদ
-সাদাত-------------------ডেইলী স্টার
-মেহেদী------------------নিউ এইজ
-এস এম রাকিব------------ ফৃ ল্যান্সার